মানসিক স্বাস্থ্য হলো আমাদের মন, আচরণগত ও আবেগপূর্ণ স্বাস্থ্যের দিকটি। আমরা কি চিন্তা করি, কি অনুভব করি এবং জীবনকে সামলাতে কিরকম ব্যবহার করি এগুলোই আসলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য। একজন মানসিক ভাবে সুস্থ মানুষ নিজের সম্পর্কে ভালো ভাবে এবং কখনোই কিছু আবেগ যেমন রাগ, ভয়, হিংসা, অপরাধবোধ বা উদ্বেগ দ্বারা আবিষ্ট হবেনা।
নিয়ম মেনে খাওয়া, ঘুম থেকে জাগা বা বিছানায় যাওয়ার বিষয়টি মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য দরকারি। যাঁরা নিয়ম মেনে চলেন, তাঁদের মানসিক ও শারীরিক দিক থেকে সুস্থ থাকার হার বেশি বলেই গবেষণায় দেখা গেছে। মানসিকভাবে ভালো থাকতে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকাটাও জরুরি। শরীরকে সক্রিয় রাখতে সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যায়াম করুন।
এখানে শিক্ষাঙ্গনে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব বলতে শুধু মনের আনন্দ বা হর্ষবর্ধন বোঝাচ্ছে না, বরং পাঠদানের পাশাপাশি সৃজনশীলতার বিকাশ, মানুষকে মানুষ হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া, ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা, সহমর্মিতা, সাহসিকতা, সততা, শৃঙ্খলাবোধ, দেশপ্রেমের মর্মার্থ, মহানুভবতার সুফল ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞানদান করাও বোঝায়।
অতএব সুস্বাস্থ্য গঠনে মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তি জীবনে একজন মানসিক দুশ্চিন্তায় জর্জরিত ব্যক্তির তুলনায় একজন মানসিক ভাবে সুস্থ ব্যক্তি অনেক বেশি সার্থক এবং সবার কাছে অতি প্রিয়। মানসিক চাপ সবসময়ই একজন মানুষকে দুশ্চিন্তা,অনিদ্রা, অনাহার,ইত্যাদিতে ভোগাই।
মানসিক স্বাস্থ্য কিঃ
মন আর মানসিক স্বাস্থ্য দুটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানসিক স্বাস্থ্য হচ্ছে আমাদের মন অভ্যন্তরীণ আচরণ এবং আবেগের সমষ্টি। মানসিক স্বাস্থ্য হচ্ছে ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ চিন্তাধারা,ভাব,আবেগ,ও বুদ্ধির সমন্বয়ে গঠিত স্বাস্থ্য।
যে সকল বিষয়ের উপর মানসিক স্বাস্থ্য নির্ভর করেঃ
যে সমস্ত বিষয়ের উপর নির্ভর করে ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য নির্ভর করে মূলত সেই সমস্ত বিষয়কে আমরা মানসিক স্বাস্থ্যের উপাদান বলে থাকি।। মানসিক স্বাস্থ্যের প্রধান প্রধান উপাদান গুলো হচ্ছেঃ
১। ব্যক্তির পারিপার্শ্বিক অবস্থা।
২। সামাজিক অবস্থান।
৩। পারিবারিক অবস্থা।
৪। মত প্রকাশের স্বাধীনতা।
৫। চিত্ত বিনোদনের সুযোগ।
৬। ব্যক্তির অর্থনৈতিক অবস্থা।
৭। বন্ধুবান্ধব তথা সহপাঠীদের সহচার্য।
৮। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম তথা ঘুম।
৯। ব্যক্তির দায়িত্ব এবং কর্তব্যের পরিধি।
উপরুক্ত বিষয়সমূহ একজন ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে।
মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO এর মতে স্বাস্থ্য হল ব্যক্তির শারীরিক , মানসিক এবং সামাজিক এই তিন অবস্থার একটি সুস্থ সমন্বয়।
আমরা বলতে পারি শুধুমাত্র ব্যক্তির শারীরিক এবং সামাজিক অবস্থার সমন্বয়ে একজন ব্যক্তি কখনোই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারেন না।বরং তাকে অবশ্যই মানসিকভাবে অসুস্থ হতে হবে।
চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের দৈনন্দিন বা ব্যক্তি জীবনে কি পরিমান প্রভাব বিস্তার করে এবং এর গুরুত্ব কতটা?
১) কার্য দক্ষতা বৃদ্ধি
সুস্থ এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্য। ব্যক্তির স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে এবং সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটায়।
২) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিবিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত।। তার তুলনায় মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তিগণ অনেকাংশেই এসকল মরণব্যাধি থেকে মুক্ত।গবেষণায় এটিও প্রমাণ হয়েছে যে, মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি গনের রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা, মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের তুলনায় অনেকাংশেই ভালো।
৩) মরণব্যাধি প্রতিরোধে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব
বিভিন্ন মানসিক রোগ যেমন সিজোফ্রেনিয়া,অল্প ক্ষণস্থায়ী মানসিক ব্যাধি,বিভ্রম ব্যাধি,শেয়ার্ড সাইকোটিক ডিসঅর্ডার,ডায়াবেটিস সহ হৃদরোগের বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগ মানসিক স্বাস্থ্যের অবহেলার কারণে হয়ে থাকে।। কাজেই মরণব্যাধি ঠেকাতে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেয়া অপরিহার্য।
৪) সুস্বাস্থ্যের উপর মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব
সুস্বাস্থ্য এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয় দুটি একে অপরের পরিপূরক।মানসিক স্বাস্থ্য ছাড়া কখনোই আমরা স্বাস্থ্য কল্পনা করতে পারিনা। বিষন্নতা, দুশ্চিন্তা,অতি আবেগের বশবর্তী হওয়া। ইত্যাদি মানসিক ভারসাম্যহীনতা নিয়ে আমরা কখনোই একটি সুস্বাস্থ্য গঠন করতে পারিনা।। অতএব সুস্বাস্থ্য গঠনে মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫) ব্যক্তি এবং সমাজ জীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব
ব্যক্তি জীবনে একজন মানসিক দুশ্চিন্তায় জর্জরিত ব্যক্তির তুলনায় একজন মানসিক ভাবে সুস্থ ব্যক্তি অনেক বেশি সার্থক এবং সবার কাছে অতি প্রিয়।মানসিক চাপ সবসময়ই একজন মানুষকে দুশ্চিন্তা,অনিদ্রা, অনাহার,ইত্যাদিতে ভোগাই। যা ব্যাক্তির ব্যক্তিক, সামাজিক, পারিবারিক জীবনে অত্যন্ত খারাপ প্রভাব বিস্তার করে।